শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩০ অপরাহ্ন

আপডেট
কারা ক্যান্টিনের আয়ের টাকা কর্তৃপক্ষের পকেটে!

কারা ক্যান্টিনের আয়ের টাকা কর্তৃপক্ষের পকেটে!

শহিদুল ইসলাম :

দেশের ৬৪টি জেলা ও কয়েকটি কেন্দ্রীয় কারাগারে কেন্টিনগুলোতে প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকায় মালামাল বিক্রি হলেও সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে। কয়েদিদের দ্বারা পরিচালিত এসব কারাগারগুলোতে সংশ্লিষ্ট জেল সুপার ও জেলার কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। কারাগারের কেন্টিনে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি ও নিন্মমানের পণ্যে সয়লাব বলে জানা গেছে।

দুর্নীতির তদন্ত ও সরকার এবিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিলে সরকারি কোষাগারে কারাগারের কেন্টিনের আয় জমা পড়বে বলে অভিজ্ঞরা মনে করেন। তবে জেল সুপাররা দাবি করেন,অধিকাংশ লাভের টাকা সরকারকে দেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, দেশের কেন্দ্রীয় ও জেলা কারা কেন্টিনের লভ্যাংশের টাকা ভাগবাটোয়ারা হয় কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। দামে অধিক হলেও চাহিদার সকল ধরনের পণ্য মেলে কারাগারে।

কারাগারের কেন্টিনে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। কারাগার থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া বেশ কয়েকজন বন্দির মুখে এসব অভিযোগ বলতে শোনা গেছে। কারাগারগুলোতে প্রতিদিন হাজারো মানুষের আনাগোনা কেন্টিনে। হাজতীদের আত্বীয় স্বজন ও দর্শনার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত বা অধিক দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগ আছে। দুর্ব্যবহার সহ নানা ভোগান্তির কবলে ক্রেতারা।

কেন্টিনে ন্যায্য দামে পণ্য বিক্রির নিয়ম থাকলেও অনেকগুণ বেশি দাম নেওয়া হয়। খাদ্য তালিকার বালাই নেই । চাহিদা অনুযায়ী মেলে না এমনকি নিন্মমানের খাবার সরবরাহ করা হয় বলেও অভিযোগ। কেন্টিন পরিচালিত হয় অদৃশ্য ছায়ার মাধ্যমে । কারা কর্তৃপক্ষ এই ছায়া। কেন্টিনের আয়ের কিছু অংশ কারা অধিদপ্তরের কর্তৃপক্ষের কাছে যায় বলে অভিযোগ আছে।

প্রতিটি কারাগারের কারা কেন্টিন থেকেই লাভের টাকা কারারক্ষী ও কয়েদিদের মধ্যে বিতরণের নির্দেশনা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে উপেক্ষিত।
বেশির ভাগ কারাগারের কারা ক্যান্টিন থেকেই বাজার মূল্যে দ্বিগুণের বেশি দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেন্টিন ছাড়াও দেশের কারাগারগুলো দুর্নীতির এক মহাচক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। কারা অভ্যন্তরে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বড় একটি সেক্টর এই কেন্টিন। নির্ধারিত দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে পণ্য খাবার বিক্রি করে প্রতিদিন মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।

সারা দেশ থেকে যার একটা ভাগ কারা অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ চক্র ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। অডিট হয় না আয়ের অর্থেরও। ক্যান্টিনের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা অসম্পূর্ণ থাকার সুযোগে অনিয়ম দুর্নীতি প্রবল। ক্যান্টিনের পিসি (প্রিজনার্স ক্যাশ) অ্যাকাউন্টের বর্তমান স্থিতির পরিমাণ উল্লেখপূর্বক প্রত্যেক মাসে কারাগারভিত্তিক আয়-ব্যয় উল্লেখসহ প্রতিবেদন তৈরি করে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানো।

ক্যান্টিন থেকে বিক্রিত মালামালের তালিকা পিসি কার্ডে মূল্যসহ অবশ্যই লিপিবদ্ধ, ক্যান্টিন পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতি মাসে দক্ষ ও সুনামধারী কারারক্ষীদের পর্যায়ক্রমে ক্যান্টিনের দায়িত্ব প্রদান করা, দায়িত্ব পালনের জন্য লভ্যাংশ থেকে সম্মানী দেওয়া।

এছাড়া দায়িত্ব প্রদানকালে কারারক্ষীদের জ্যেষ্ঠতাকে মূল্যায়ন করা। ক্যান্টিন পরিচালনার সব লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিচালনা করার বিধান থাকলেও তা উপেক্ষিত হচ্ছে। কেন্টেনের আয়-ব্যয়ের জন্য আলাদা ক্যাশ বহিসহ সব রেজিস্টার সংরক্ষণ করা এবং এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মাসিক সম্মানী হিসাবে দেওয়া। বন্দি পিসি ক্যাশের মাধ্যম ব্যতীত নগদ টাকায় ক্যান্টিন পরিচালনা বন্ধ করা। এজন্য বন্দি পিসি কার্ডে ক্রয়কৃত মালামাল এন্ট্রি করে বন্দিদের পিসি কার্ড থেকে কর্তনের ব্যবস্থা করাও কাগজে থাকলেও বাস্তবে নেই। এচিত্র বেশি দেখা যায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী,চট্টগ্রাম কারা কেন্টিনে।

এসব কারাগার গুলোতে জেল সুপার ও জেলাররা বদলি হয়ে যেতে তদবির করতে হয় ঊর্ধ্বতন উপর মহলের গুনতে হয় মোটা অংকের টাকাও । যেমন কক্সবাজারের সাবেক জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন সরকারি একাউন্টে ২০ লাখ টাকা ঘুষ কেলেঙ্কারি ঘটনায় বদলি হন দিনাজপুরে। কিছুদিন থাকার পর আবার গুরুত্বপূর্ণ কারাগার নারায়ণগঞ্জে পদায়ন হয়েছেন।

সেই আলোচিত জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেনকে বর্তমান ডিজি পদায়ন করেন কিভাবে? এরপর থেকে চলছে আলোচনা সমালোচনা। অনেকেই বলছেন টাকা হলেই যে কোন কারাগারে যেকোন সময় পদায়ন হওয়া যায়। কিন্তু মেধাবী ও আওয়ামী পন্থী কর্মকর্তাদের কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়ন করেছেন কারা অধিদপ্তরের শীর্ষ এক কর্মকর্তা ।

অভিযোগ আছে, কয়েকজন বিএনপি- জামাতপন্থী কর্মকর্তাকে কেন্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়ন করেছেন বর্তমান আইজি প্রিজন। অনুসন্ধানের জানা গেছে, সারা দেশের কারাগার গুলো থেকে সিনিয়র জেল সুপার ও জেলারের মাধ্যমে কারা অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে মাসে কোটি টাকা দিতে হয়।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |